রাজেনবাবু মানুষটি একটু শৌখিন। শৌখিন মানে বাবু নয়। হাঁটুর কাছে কাপড় তুলে, দু-হাতে দুই ঝুলি নিয়ে বাজার ক’রে আসতে আপত্তি নেই তাঁর; কিন্তু শোবার সময় বালিশে একটু সুগন্ধ চাই। এক জামা প’রে সপ্তাহের ছ’দিন আপিশ করবেন, এদিকে কাচের গেলাশে ছাড়া জল খাবেন না। ঠিকে-ঝি কামাই করলে রাত থাকতে বিছানা ছেড়ে উনুন ধরিয়া রাখবেন, তারপর বারান্দার ভাঙা তক্তায় খালি গায়ে ব’সে গুনগুন করবেন ভৈরবী কি যোগিয়া।
পনেরো বছর বয়সে বিয়ে হ’য়ে, বাপের বাড়িতে এক বছর কাটিয়ে শিশিরকণা প্রথম যখন স্বামীর ঘর করতে এলেন, স্বামীর এ-সব ছোটোখাটো শখগুলি তাঁর মনে বিশুদ্ধ কৌতুক জাগিয়েছিলো। এমনকি, এর কিঞ্চিৎ প্রশ্রয়ও তিনি দিয়েছিলেন বিছানার তলায় অগুরুর শিশি লুকিয়ে রেখে-তার চেয়েও বেশি, ঠিকে-ঝির সাহায্যে সংগৃহীত কয়েকটি পথে-ঝরা বকুল কোনো রাত্রে নিজের আঁচলে বেঁধে নিয়ে। সুগন্ধ ভালো; সুগন্ধের উৎসটা আরো ভালো হ’তে দোষ কী।
কয়েক মাস পরে শিশিরকণা যখন অন্তঃসত্ত্বা হলেন, আর রাজেনবাবু বললেন- ‘বেশ হ’লো-ছোট্টো ফুটফুটে একটা মেয়ে হবে- বেশ।’ তখন স্বামীর এই নতুন শখটিতে বেশি সুখী না-হ’য়ে তিনি বললেন, ‘কেন, মেয়ে কেন?’
Reviews
There are no reviews yet.